খরচ কমিয়ে কিভাবে সঞ্চয় করা যায়

টাকা সঞ্চয় করতে গিয়ে অনেকেই সমস্যায় পড়েন। জেনে নিন খরচ কমানোর কার্যকর উপায় এবং ২০২৫ সালে সহজে সঞ্চয় করার বাস্তব টিপস।

ভূমিকা

আজকের দুনিয়ায় আয় যতই বাড়ুক, খরচও সেই হারে বেড়ে যাচ্ছে। অনেকে মাসের শুরুতে বেতন পান, কিন্তু মাসের মাঝেই দেখেন টাকা শেষ। তখন আবার ধার বা ক্রেডিট কার্ডের ওপর নির্ভর করতে হয়।
আসলে সঞ্চয় করা কোনো কঠিন কাজ নয়, তবে এর জন্য কিছুটা পরিকল্পনা, সচেতনতা এবং নিয়মিত অভ্যাস জরুরি।

খরচ কমিয়ে সঞ্চয় করার অনেক উপায় আছে। ছোট ছোট পরিবর্তন এনে আপনি মাস শেষে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টাকা জমাতে পারবেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক কিছু কার্যকর কৌশল।

সাপ্তাহিক বাজার করা 

সঞ্চয় করার সব থেকে সহজ ও কার্যকরী কৌশল হলো সপ্তাহে একবার বাজার করা।এর অন্যতম কারণ হলো এতে অনেক অপ্রাসঙ্গিক খরচ এড়ানো যায়।তাছাড়া বাসায় কোন অতিথি আসলে সাথে সাথে আপ্রায়ন করা যায়। তাই সারা সপ্তাহের যাবতীয় খরচাপাতি একসাথে শেষ করলে মাস শেষে একটা ভাল পরিমান টাকা হাতে রাখা সম্ভব হবে।

আরো পড়ুন :নারীদের ঘরে বসে কাজ করার উপায়

বাইরের খাবার পরিহার করা 

যদি কেউ চায় যে তার সংসারের খরচ থেকে সে কিছু টাকা সঞ্চয করুক তাহলে তার উচিত বাইরের খাবার  যথাসম্ভব পরিহার করা।এর কারন হলো যখন কেউ বাইরে খেতে যায় তখন সে না চাইলেও অনেক টাকা খরচ করে ফেলে যেটা সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় একটা খরচ যেটা সহজেই এড়ানো সম্ভব।তাই সঞ্চয় করার মানসিকতা থাকলে বাইরের খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমিয়ে আনতে হবে।

অফিসে বাসার খাবার নিয়ে যান

যারা কর্মজীবী তারা তাদের দুপুরের খাবার বাইরে খেতে স্বাচ্ছন্দবোধ করে কিন্তু এইটা যে তাদের জন্য শারীরিক এবং অর্থনৈতিক উভয় ক্ষেত্রে ক্ষতিকারক টি এটা তারা খুব কমই উপলব্ধি করতে পারে।সাধারণত ঘরের খাবার যতটা নিরাপদ বাইরের খাবার  ততটা নিরাপদ নয় এবং এটি অনেক সময় বিভিন্ন রোগের কারণ হয়ে থাকে। তাছাড়া এটি সঞ্চয়ের পথে বড় ধরনের প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে তাই যদি টাকা জমানোর ইচ্ছা থাকে তাহলে অবশ্যই বাসা থেকে খাবার নিয়ে যাওয়া উচিত কারণ এর মাধ্যমে মাস শেষে কিছুটা হলেও টাকা সেভ করা সম্ভব হবে। 

অফার প্রাইজে কিছু না কেনা 

বিভিন্ন সময় দেখা যায় যে যখনই কোন পত্রিকায় অথবা কোন দোকানে অফার প্রাইসে কিছু বিক্রয় করার জন্য বিজ্ঞাপন দেয়া হয় বেশিরভাগ মানুষ কিছু না ভেবে ওই অফার প্রাইসে জিনিসগুলা কিনে নেয়।কিন্তু এর মাধ্যমে তারা যে তাদের টাকাটা অপচয় করে সেটা তারা খুব কমই বুঝতে পারে।এর কারণ হলো অফার প্রাইজে যেসব জিনিস বিক্রয় করা হয় সেগুলো সাধারণত উন্নত মানের হয় না এবং এগুলো খুব শীঘ্রই মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে পড়ে। যেহেতু এইসব দামে জিনিসগুলো কেনার পর খুব জলদি ব্যবহার করতে হয় তাই কিছুদিন পরে জিনিসগুলো আবার কিনতে হয় যার জন্য প্রথমদিকে সামান্য টাকা সেভ হয়েছে মনে হলেও পরবর্তীতে ডাবল খরচ হয়ে বসে থাকে। 

আরো পড়ুন : ছাত্র জীবনে বাড়তি আয়ের উপায় 

কার্ড দিয়ে কেনাকাটা না করা 

বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যায় তারা কার্ড দিয়ে কেনাকাটা করতে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করে ক্যাশ টাকা দিয়ে কেনার চেয়েও যেটা মোটেও করা উচিত নয়।কার্ড দিয়ে কেনাকাটা করলে বোঝা যায় না যে আপনি ঠিক কতটা খরচ করছেন কারণ আপনি টাকাটা কার্ডের মাধ্যমে দেন আর টাকাটা চোখে দেখা যায় না তাই আপনি খরচ করার সময় অত কিছু খেয়াল করেন না।যখনই আপনি ক্যাশ টাকা দিয়ে কোন কিছু ক্রয় করেন তখন আপনি অনেক হিসাব করে টাকা গুলা বিক্রেতাকে দিয়ে থাকেন যার কারণে আপনার খরচের মাত্রাটা খুব প্রবলভাবে পরিলক্ষিত হয়।এতে আপনি খরচ করতে দ্বিধাবোধ করেন যার কারনে আপনার অনেক টাকা অপচয় হতে রক্ষা পাই এবং সহজে আপনি সেই টাকা সঞ্চয় করতে পারেন। 

আগে জমান পরে খরচ করুন 

টাকা সঞ্চয় করার ক্ষেত্রে সবার প্রথমে যে জিনিসটি লক্ষ্য রাখতে হবে সেটি হলো আগে আপনার টাকা জমাতে হবে পরে সেই টাকা খরচ করতে হবে। যখন আপনি টাকা জমানো শুরু করবেন তখন আপনি দেখবেন আপনার খরচ করা প্রবণতা অনেকাংশ কমে আাসছে।আসলে যখন মানুষ কোন কিছু আগে পর্যালোচনা করে তখন সে চাইলে অনেক কিছু করতে পারে।এটা যেমন জীবনের সব ক্ষেত্রে সত্য ঠিক তেমনিভাবে টাকা সঞ্চয় করার ক্ষেত্রও এটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।তাই প্রত্যক্ষ মানুষের উচিত এই অভ্যাসটা গড়ে তোলা যাতে সে তার ভবিষ্যতের জন্য  কিছু পরিমাণ টাকা সঞ্চয় করতে পারে। 

সব সময় ভ্রমণ নয়

পৃথিবীতে প্রতিটা মানুষের ইচ্ছা থাকে সে পৃথিবীটা ঘুরে দেখবে যার জন্য সে ভ্রমণে বেরিয়ে যায় কিন্তু ভ্রমণের জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় নির্বাচন করা উচিত। কারণ এতে অনেক রকমের সুবিধা রয়েছে যার মধ্যে প্রথমটা হলো সঞ্চয় করা। এই ক্ষেত্রে অবশ্যই একটি কথা ভুললে চলবেনা যে কেউ ভ্রমণ করতে নিরুৎসাহিত করছেনা কারণ বাইরে ঘুরতে যাওয়া মানুষের জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তাই বাইরে ঘুরতে যাওয়া অনেক জরুরী কিন্তু তা অবশ্যই একটা সময় পার হওয়া উচিত যাতে করে একটা একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ সেভিংস থাকে। 

খরচের হিসাব রাখুন 

সঞ্চয় করার আরেকটি জনপ্রিয় উপায় হলো যে যে পরিমাণ টাকা খরচ করেছেন সেই পরিমাণ টাকার একটা হিসাব রাখুন। এতে দেখা যাবে যখনই আপনি ওই টাকাগুলার হিসাব দেখবেন তখন বুঝবেন ঠিক কোন জায়গায় আপনি বেশি পরিমাণ খরচ করে ফেলেছেন যেটা না করলেও আপনার সংসার চলতো তাই যদি অনর্থক খরচ কমিয়ে কিছু টাকা ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করে রাখতে চান তাহলে করা টাকার একটি হিসাব আপনার নিকট সংরক্ষণ করে রাখুন।

উপসংহার

খরচ কমিয়ে সঞ্চয় করা একদিনে সম্ভব নয়। তবে ধীরে ধীরে নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত করলে জীবনযাত্রায় বড় পরিবর্তন আসবে।
অপ্রয়োজনীয় খরচ বাদ দিয়ে, সচেতনভাবে কেনাকাটা করে এবং সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুললে আপনি মাস শেষে বেশ ভালো অঙ্কের টাকা জমাতে পারবেন।

মনে রাখবেন, ছোট ছোট পদক্ষেপই বড় সঞ্চয়ে রূপ নেয়। আজ থেকে শুরু করুন, আগামীকাল আপনার জন্য সহজ হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url